সৌদি আরব প্রতিনিধি: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করাসহ জীবন পরিচালনায় ইসলামের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। বিদায় হজের ভাষণের অনুকরণে সমবেত হাজিদের উদ্দেশে প্রতি বছর হজের দিন খুতবা দেওয়া হয়।
আজ (২৩ সেপ্টেম্বর, বুধবার) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে আগদ ২০ লক্ষাধিক মানুষকে সামনে রেখে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে হজের খুতবা প্রদান করেন সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আশ শায়খ। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার কিছু পরে শুরু হয়ে খুতবা শেষ হয় ১২টা ৪৪মিনিটে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে খুতবা প্রদান শুরু করেন গ্র্যান্ড মুফতি। এরপর বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য। তাই আমি তারই প্রশংসা করছি। সেই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মোহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও তার পক্ষ থেকে প্রেরিত পুরুষ (রাসূল)। কামনা করছি, তার প্রতি, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবিদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবারিত রহমত বর্ষিত হোক।
খুতবার শুরুতে তিনি আরাফার দিবস সম্পর্কে বলেন। তিনি বলেন আরাফা এমন এক দিবস, যেদিন বান্দারা হাশরের ময়দানে নিজেদের সম্মিলনের কথা স্মরণ করে। এদিন তারা সবাই পার্থিব জৌলুশ ও চাকচিক্য থেকে মুক্ত হয়। তারা দুই টুকরা সফেদ কাপড় গায়ে জড়ায়। এ যেন তাদের কাফনের কাপড়। যেন তারা হাশরের মাঠে তাদের রবের সামনে দাঁড়ানোর জন্য পুনরুত্থিত হয়েছে। সবার কাঁধ আকাশ অভিমুখী। সবার স্বর দোয়া ও কান্নায় গুঞ্জরিত। পার্থক্য শুধু এতটুকু, এদিন দোয়া কবুল করা হবে। আর হাশরের দিন খাতাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। সুতরাং হিসাবের খাতা বন্ধ করার আগেই দিনটিকে কাজে লাগাতে হবে।
এরপর তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। ইসলামে শুধু মানবাধিকার নয়, পশুর অধিকার সম্পর্কেও বলা হয়েছে। ইসলাম সাদা-কালো, ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি। ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মীয় সভ্যতাই উৎকৃষ্ট। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে।
তিনি বলেন, গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা টিকিয়ে রাখা যায় না। দেশ দখল ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে নিরাপত্তা অটুট রাখা সম্ভব নয়। অবরোধ, অনাহার, অধিকার হরণের ফলাফল কখনোই কল্যাণকর নয়। এগুলোর ফলে শত্রুতা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
হজের ইমাম বলেন, শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে নৈরাজ্য ও সন্দেহ ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য সবাইকে নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকেও তিনি কঠিন ভাষায় ঘৃণা প্রকাশ করে সবাইকে শন্তির পথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাস করে জমিনের অধিবাসীদের কষ্ট দেয়, তারা ইসলাম থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। তাদের মুখে ইসলামের কথা পরোক্ষভাবে ইসলাম অবমাননার শামিল।
খুতবায় তিনি কোরআন-হাদিসের মূলনীতির ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পরস্পরের ভেদাভেদ ভুলে শান্তির বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সম্প্রতি মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। হজের ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের দোয়া করেন। খুতবার শেষ দিকে গ্র্যান্ড মুফতি বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আসুন, সবাই মিলে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রক্ষা করি। সেগুলো হলো- ধর্ম, সম্পদ, ইজ্জত, জীবন ও বিবেক-বুদ্ধি রক্ষার অধিকার।